এই লিখাটা একটা কনটেস্টের জন্য লিখেছিলাম। হাতে খুবই কম সময় ছিলো, তাড়াহুড়ো করে ঘাটাঘাটি করে লিখা।
টার্ডিগ্রেড!
এক অ্যালিয়েন বৈশিষ্ট্যধারী প্রাণী!
চলুন দেখে নেয়া যাক টার্ডিগ্রেডের ভিনগ্রহেও বেঁচে থাকার জন্য যেসব ক্ষমতা রয়েছে-
১. পৃথিবীতে যত রকমের দুর্যোগ রয়েছে সবগুলোর বিরুদ্ধে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই টার্ডিগ্রেডের বেঁচে থাকার ক্ষমতা ! ০.০৫ মি.মি. থেকে ১.২ মি.মি. দৈর্ঘ্যের এ অতি ক্ষুদ্র প্রাণীটি বছরের পর বছর পানি ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে!
২. এই টার্ডিগ্রেড ১৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও বেঁচে থাকতে পারে। তবে আসল কথা হলো এতো উচ্চ তাপমাত্রায় যেসব প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে তারা সাধারণত কম তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে না! কিন্তু এই টার্ডিগ্রেড-
শূণ্য ডিগ্রি সেলসিয়াস? — না!
মাইনাস ১০০° সেলসিয়াস? —আরও নিচে!
হু..সবচেয়ে নিম্ন তাপমাত্রা -২৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও ১৫ মিনিটের মতো বেঁচে থাকতে সক্ষম!
৩. পৃথিবীর গভীরতম স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরের সর্বমোট চাপ ১০০ ম্যাগাপ্যাসকেল! এতো দানবীয় চাপে পৃথিবীর যেকোনো প্রাণীরই প্রোটিন ও ডিএনএ ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়!
কিন্তু টার্ডিগ্রেড😑! এই প্রাণীর ডিএনএ ১০০ ম্যাগাপ্যাসকেল তো দূরের কথা, ৬০০ ম্যাগাপ্যাসকেল চাপেও অক্ষত থাকবে, যা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন! পৃথিবীর অন্য কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে এই ব্যাপারে চিন্তাও করবেন না😶!
৪. ক্ষুদ্র এই টার্ডিগ্রেডের দেহের আবরণ পানিশূন্যতায় ছিদ্র হয়ে যাওয়ার কথা! কিন্তু এটি ১২০ বছর পর্যন্তও পানি ছাড়া তার দেহকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে!
৫. টার্ডিগ্রেড পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় ১০০০ গুণ বেশি তেজস্ক্রিয়তা প্রতিহত করতে পারে!
৬. টার্ডিগ্রেডকে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে নিয়ে মহাশূন্যের বিভিন্ন মহাজাগতিক তরঙ্গ বিকিরণের সম্মুখীন করার পরও এটি স্বাভাবিক প্রাণীর মতো বেঁচে থাকতে পেরেছিলো!
৭. এদের শরীরে অনন্য কিছু জিন আছে যেগুলো টিডিপি বা টার্ডিগ্রেড স্পেসিফিক এন্ট্রিনসিকেলি ডিসর্ডারড প্রোটিন তৈরি করে! এই প্রোটিন প্রতিকূল সময়ে তাদের পুরো দেহকে কাচসদৃশ এক ধরনের আবরণে ঢেকে দেয়!
৮. টার্ডিগ্রেডের ক্রিপ্টোবায়োসিস নামক অদম্য ক্ষমতা রয়েছে! অর্থাৎ এটি পানিশূন্যতার ইঙ্গিত পেলে তার প্রাণকে লুকিয়ে রেখে নির্জীব অবস্থায় বছরের পর বছর কাটিয়ে দিতে পারে! এ অবস্থায় এর বিপাকের হার ০.০১% পর্যন্ত নেমে আসে!
৯. মহাকাশ যাত্রায় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিকিরণের জন্য দায়ী Reactive Oxygen Species। কিন্তু টার্ডিগ্রেড এই বিকিরণের সামনে এমন Anti-oxidant উৎপন্ন করে যা সেই ভয়াবহ বিকিরণ রশ্মিকে প্রশমিত করে ফেলে! 👽
১০. টার্ডিগ্রেডের মাঝে Dsup (Damage suppressor Protein) নামক একটি বিশেষ প্রোটিন বিদ্যমান, যা বিভিন্ন উচ্চ বিকিরণ (বিশেষত এক্স-রে বিকিরণ) থেকে নিজের ডিএনএ-কে রক্ষা করে থাকে। অন্যান্য কোনো প্রাণীর মাঝে এর অস্তিত্ব এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি! 👽
প্রতিটি বৈশিষ্ট্যেই রয়েছে পৃথিবীর যেকোনো প্রাণী থেকে ভিন্নতার আবাস। তাই ভীনগ্রহ থেকে এই প্রাণী কোনো গ্রহাণু কিংবা মহাজাগতিক কোনো বস্তর সাথে পৃথিবীতে প্রবেশ করে অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে এখনও দিব্যি বেঁচে আছে, যা টার্ডিগ্রেডকে অ্যালিয়েন মনে করার জন্য যথেষ্ট বিশ্বাস তৈরি করে করে।👽