ভূতের কাহিনী আর সত্যতা

 #bcb_bhoot


আমরা দু'তলায় থাকি। আমাদের বাসার ছাদে প্রায়শই কারোর হেঁটে যাওয়ার শব্দ শুনতে পাই। অনেক জোরে জোরে, যেনো পায়ের গোড়ালি দিয়ে ছাদে লাথি মেরে মেরে হাঁটে! তবে পরিষ্কার বুঝা যায়, কেউ থাকলে ওখানে মাত্র একজনই আছে। মানুষ নয়, এটা নিশ্চিত। কারণ শব্দটা যে রাত ১১.০০ টার পর শুনা যায়! মা-বাবা এই ব্যাপারে অনেক আগেই আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে উপরে ভৌতিক কিছু দৌড়াদৌড়ি করে, আমারাও জানি আমাদের এলাকায় এসব ঘটনা অনেকই আছে। তাই ভাই-বোনেরা নিঃশব্দে ঘরে বসে বসে হাঁটার আওয়াজ শুনি! 

ধুম-ধুম-ধুম---ধুম-ধুম

কয়েক সেকেন্ড পরপর।


এক বছর পর ঐ ছাদে এক কক্ষের একটি রুম বানানো হলো! সেখানে যিনি থাকতেন উনি রাত্রে বাসায় ফিরতেন, সন্ধ্যার পরেই, নাম- রফিক! আমি আর আমার ছোট ভাগ্না চলে যেতাম ওনার রুমে ল্যাপটপে কার্টুন দেখতে! 

ভাগ্নাটা প্রচণ্ড দুষ্ট, এলাকা বলেন আর স্কুল- সবাই চিনে ওকে! তো রাত ১০ টা পর্যন্ত কার্টুন দেখতাম।

এক বছরের বেশি এভাবেই চলল, তবে ছাদের শব্দটা আমরা এখনও শুনতে পাই। কিন্তু রফিক সাহেবকে জানালে বললেন, তিনি কোনো শব্দ শুনতে পান না, ছোটোখাটো কিছু শুনলেও ওসব খেয়াল করেন নি!

একদিন রফিক সাহেব এসে দেখেন, ওনার দরজা খোলা, ভিতরে ঢুকে দেখলেন সবই ঠিক আছে শুধু ল্যাপটপটা খোলা, তবে অন করা নয়। উনি তাড়াতাড়ি আমাদেরকে ফোন দিলেন আর উপরে আসতে বললেন! 

আমারও অবাক! তবে সন্দেহের কথা হলো ঐ রুমের একটা চাবি আমাদের ঘরেও আছে! তবে অন্য আরেকজনের তালাবদ্ধ রুমে ঢুকার মতো মানসিকতার কেউ আমাদের ঘরে নেই! চাবিটা তো আমাদের দরজার পাশে এখনও ঝুলানো আছে! তাহলে কে ঢুকলো?

টাকা-পয়সা বা জিনিসপত্র কিছুই হারায় নি জেনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সবাই ঘরে ফিরলো....


আবার আরেক শীতের রাত্রের ঘটনা-

 আমরা ওনার ঘরে কার্টুন দেখতে যাই! কিছুক্ষণ পর ভাগ্নাটা বাইরে চলে যায় আমরা টের পাই নি! ছাদটা অনেক বড়....

হঠাৎ বাইরে থেকে চিৎকার দিয়ে ওঠে ভাগ্না! তাড়াতাড়ি সেখানে গিয়ে দেখি ও একটা পিলারের সাথে জড়িয়ে ধরে আসে...

ওকে ঘরে নিয়ে আসি, রাত ১০.০০ টা ! তখন বাইরে হালকা শীতল হাওয়া বইছিলো!

ও বলল, ছাদে সে কাউকে দেখেছে, সাদা জামা পরা! ওটা নাকি উড়াল দিয়ে চলে গেছে!

পরদিন ওর প্রচণ্ড জ্বর এসেছিলো!

আর আমারও আরও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে লাগলাম যে ছাদে নিশ্চয়ই কিছু আছে।


এখনও আমাদের বলা হয় ছাদে কিছু আছে!


🔍ব্যাখ্যা-


ধুম-ধুম শব্দ-

আমাদের বাসার সাথে পাশের বাসার ছাদ একসাথে মিল করা! মানে পাশের দু'তলা বাসার ছাদটা আমাদের বাসার দুতলার ছাদের সাথে সংযুক্ত! তবে আর কোথাও কোনো সংযোগ নেই, মাঝে রাস্তা! তো পাশের বাসার গৃহকর্মী আনেক রাত করে মসলা বাটতেন, জানি না কেনো! সম্ভবত স্টার জলসা আর জি বাংলার সিরিয়ালগুলো দেখতে দেখতে অনেক রাত হয়ে যেতো, না হয় ঐ রুটিনে অভ্যস্ত! ওরা নিচতলায় থাকতো! ফ্লোরে ঘুটনি দিয়ে ঘুট ঘুট করে মসলা বাটতেন! শব্দটা যেহেতু আমাদের ছাদের সাথে একটা কঠিন মাধ্যমে আসার সহজ পথ পেয়েছে, তাই আমরা ছাদ দিয়েই ধুম ধুম শব্দ শুনতে পাই! বিষয়টা অনেকদিন পরে আমরা ধরতে পারি! 

আর রফিক সাহেবের শব্দ না শুনার ব্যাপারটা হলো এই- 

আমাদের যে ছাদে শব্দ শুনা যেতো, ঐ ছাদটাই রফিক সাহেবের কাছে মেঝে! কারণ তিনি তো আমাদের উপরের তলায় থাকতেন! তাই তার কাছে স্বাভাবিক ভাবেই মনে হতো নিচ থেকে শব্দ আসতেছে!


রফিক সাহেবের দরজা খোলা থাকা-

এই বিষয়টা অনেকেই হয়ত বুঝে ফেলেছেন! কারণটা আমার ভাগ্না! ও কোনোভাবে বুঝে ফেলে ল্যাপটপের ঘরের চাবি আমাদের ঘরেও আছে! তাই সে চাবিটা নিয়ে দরজা খুলে ফেলে! কিন্তু ল্যাপটপ চালানো তখনও জানায় বেশি কিছু করতে পারে নি! ভুল করে দরজা খোলা রেখেই ঘরে চলে আসে!


সাদা জামা-

ভাগ্নার সাদা জামা পর কিছু দেখার বিষয়টা একটু অন্যরকম! শীতের রাত ছিলো আর সাথে ছিলো হালাক হাওয়া! ভাগ্না যেখানে সাদা কিছু দেখেছিলো, ঠিক সেখানেই আমরা ধোয়া কাপড় শুকানোর জন্য মেলে দিতাম! সেদিন হয়তো কাপড় ঘরে আনা হয় নি! তাই সে আসলে একটা সাদা টিস্যু ওড়নার পড়ে যাওয়ার দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠে! বিষটা বুঝতে পারি সকালে! কারণ ওড়নাটা নিচেই পড়েছিলো...


[এই পুরো লিখাটা ফেসবুকে ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান গ্রুপের একটা কনটেস্টে লিখেছিলাম!]

Post a Comment

Previous Post Next Post